সংবাদদাতা: মুম্বই : কলকাতায় এমনটা হলনা কেন এখনও ? প্রশ্ন টা ঘুরপাক খাচ্ছিল। দেশের পশ্চিম প্রান্ত যা পারলো তাত্ত্বিক বঙ্গসমাজ কি একটু উদ্যোগী হতে পারতো না?
মুম্বই এর ভারসোভা এলাকায় আরব সাগরের লাগোয়া রক বিচ থেকে খুব একটা দূরে নয়। অন্ধেরি পশ্চিমে আরাম নগরেই খুলেছে এই কাফে। ভাবছেন এটা এমন কী হলো ! খুলে বলি, ওই কাফে গোটাটাই চালান তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। রান্না বান্না থেকে পরিবেশন সবটাই ওদের হাতে। মানে গোটাটা র দেখভাল করছেন রূপান্তরকামী রা। যারা ওখানে গেছেন তারাই বলছেন, একবার এলে বারবার আসতে মন চায়, শান্ত পরিবেশ তো বটেই এতো ঘরোয়া আর এতো বন্ধুত্বপূর্ণ এদের ব্যবহার , সত্যিই দেখবার মতো। কাফের নাম, ‘ বোম্বই নজারিয়া ‘।
সুপ্রিম কোর্টের সুপ্রিম আদেশ থাকা সত্বেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায় কে প্রতিনিয়তই যে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে তা উপলব্ধি করতে কোনও হাতেগরম প্রমাণ তুলে দিতে হয় না। যারা নিজেদের শিক্ষা , রুচি, সংস্কৃতির চর্চায় ইতিমধ্যেই মূল স্রোতে গা ভাসিয়েছেন তাদের কথা বাদ দিলে বাকি অংশটা কিন্তু আজও এদো গলিতেই চক্কর কাটছেন। কখনও বাড়ি পেয়েও অনাহুত দের বাস করা, আর যাদের সেটুকুও জোটেনি তাদের হালহকিকত তো ট্রাফিক সিগনাল, ট্রেনের কামরায, বাসে ট্রামে সর্বত্রই মালুম হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই না ?
আসলে বছর দুয়েকেরও আগে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কে নিয়ে এই প্রয়াস শুরু হলেও এই চিন্তাভাবনা এসেছিল বেশ কিছু বছর আগে। কাফের প্রতিষ্ঠাতা দিয়েগো মিরান্ডার কথা তেই তা স্পষ্ট। তার বাবার ইচ্ছে ছিলো ওদের জন্য কিছু করার, সেই ভাবনা থেকেই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ গুলোকে নিয়ে এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে যাত্রা শুরু ‘ বোম্বই নজরিয়া ‘ র। এই নামের নেপথ্যে ও একটা কারণ রয়েছে। বোম্বাই টা জুড়ে দেওয়া জেনে বুঝেই, কারণ পুরোনো বম্বে র ফিলিং টা রাখতে চা ওয়া । আর নজরিয়া শব্দ রাখার পিছনে উদ্দেশ্য একেবারে পরিষ্কার, ওরা চাইছেন এই রূপান্তরকামী দের প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টভঙ্গি এবার অন্তত বদলাক। আর উদ্দেশ্য টা যে অনেকাংশেই সফল তাও প্রায় দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। কাশ্মীরি গুলাবি চায়ের সঙ্গে পাও ভাজি, কিমা পাও, মিসাল পাও খেতে খেতে বাকিরা কখন ওদের সাথে একাত্ম হয়ে গেছেন ! ভুয়সী প্রশংসা ও জুটছে সকলের, ব্যবহারে, কাজে ওরা যেকোনো কাউকে টেক্কা দিতে পারেন সেটা প্রমাণিত।
উদ্দেশ্য মহৎ, চেষ্টা টাও সফল। ষোলোআনা র মধ্যে আঠারো আনা সত্যি। ওদের প্রতি বাকিদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে এই প্রয়াস যদি এতটুকুও কাজে লাগে তাহলে শুধু আরব সাগরের পাশে বাণিজ্য নগরীতে কেন , দেশের আর পাঁচটা শহরেও চলুক এরকম রেস্তোরাঁ, কাজ পাক ওরা, মিশুক মূল স্রোতে। তাই সবার আগে বদল হোক আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। বোধহয় একথা মাথায় রেখেই কাফে র নজরকাড়া ক্যাচ লাইন ” নাজারিয়া বদলো , নজারা বদলেগা “।