সাধু বৈষ্ণব দের চড়ুইভাতি, মৈত্রীর বার্তা ডুয়ার্সের ডুডুয়ার চরে

খোলা হাওয়ায়, সবুজে, নীল এ মুক্তমনা সম্প্রীতির এক অনন্য নজির গড়া হলো, ঠিক গত ৬ বছর ধরে যেমনটা হয় । মুক্ত আকাশে নদীর চরে সাধু বৈষ্ণব দের চড়ুইভাতি।
” প্রীতি প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে, স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদের কুঁড়েঘরে। ” এমন ছবি ধরা পড়লো ডুয়ার্সের ডুডুয়া নদীর চরে। জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি ব্লকের একটি বেসরকারি মেডিকেলের কর্ণধার রতন চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে বিগত পাঁচ বছর ধরে ব্লকের বিভিন্ন সাধু বৈষ্ণবদের নিয়ে হয়ে আসা বনভোজন এবারে ষষ্ঠতম বছরে পদার্পণ করল।

মানুষের কল্পনায় স্বর্গ হলো এক অপার আনন্দ নিকেতন। সেখানে দুঃখের প্রবেশ নিষেধ। স্বর্গ হলো সুখের রাজ্য। সেখানে সর্বদা সুখ ও শান্তি বিরাজমান। এই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যদি মৈত্রী, প্রীতি ও প্রেমের বন্ধনে মিলিত হয় তাহলে এই পার্থিব ও সমাজে স্বর্গের মতো শান্তি স্থাপিত হবে। এমন মানসিকতা নিয়ে রতন বাবুর এই প্রয়াসে এদিন তার মেডিকেল থেকে ৩৫ টি টোটো করে ৩০০ অধিক সাধু বৈষ্ণবদের নিয়ে ধুপগুড়ি – গয়েরকাঁটাগামী জাতীয় সড়ক ধরে ডুডুয়া নদীর চরে খোলা আকাশের নিচে শুরু হয় বনভোজন।

কেবলমাত্র স্নেহ, প্রীতি, ভক্তি, সরলতা দ্বারাই এই পৃথিবীতে স্বর্গ স্থাপন করা যায়। কিন্তু এই পৃথিবীর শান্তি আজ বিঘ্নিত। হিংসা,বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নাগপাশে এই পার্থিব সমাজ জর্জরিত। সম্পূর্ণভাবে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে রতন বাবুর এই প্রয়াস এর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়েছে তার সহকর্মীরাও। তাই তারা এই বনভোজনের উদ্যোগকে আমরা সবাই বলে নামকরণ করেছে। এদিন সবাইকে সেই খোলা আকাশের নিচে নিয়ে গিয়ে প্রথমে হিন্দু ধর্মমম্বলি নিয়ম নীতি মেনে বিভিন্ন পূজারচেনা হয় বনভোজন প্রাঙ্গণে। প্রত্যেকেই একে অপরের সঙ্গে আজকের এই বিশেষ দিনটিকে আনন্দমুখর ভাবে কাটিয়ে তোলেন।

আজ পৃথিবীর পরিবেশ শান্তিময় নয়। অশান্তি এই পৃথিবীর পার্থিব ও পরিবেশে ছেয়ে গেছে। মানুষে মানুষে হিংসা বিদ্বেষ পরস্পরকে পরস্পরের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ফলে হিংসা, মারামারির কালো আঁধার ছেয়ে ফেলেছে পৃথিবী কে। মানুষ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মনুষ্যত্ব ভুলে অপরকে করছে নিপীড়িত,নির্যাতিত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত। ফলে এই পৃথিবীর পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। এই পার্থিব ও পরিবেশ থেকে শান্তি বিদূরিত হচ্ছে। মানুষে মানুষে বিরোধ বেড়েই চলছে। ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ,ভ্রাতৃ বিরোধ পরিবেশকে কলুষিত করছে।এই পৃথিবী থেকে হিংসা, বিদ্বেষ দূর করে শান্তি স্থাপন করতে হলে এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে প্রেম, মৈত্রী ও ভালবাসার বন্ধনে মিলিত হতে হবে। যেদিন এই পৃথিবীর মানুষ হিংসা ভুলে মৈত্রীর বন্ধনে মিলিত হবে সেদিন সমস্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, যুদ্ধ, ভ্রাতৃবিরোধ দূর হবে এবং সমস্ত তরবারিই কাঠের তরবারিতে পরিণত হবে। এর ফলে এই পৃথিবী শান্তিময় হয়ে উঠবে। এই পৃথিবীর মধ্যে স্বর্গীয় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

এদিনের এই বনভোজনের বিভিন্ন পদের খাওয়ার খাওয়ানো হয়। রীতিমতো রুটি রুটি সবজি থেকে শুরু করে মধ্যাহ্নভোজনে বিভিন্ন নিরামিষ পদের খাবারের সঙ্গে ভাতের বন্দোবস্ত করেন উদ্যোক্তারা।

এদিনের বনভোজনের বেশিরভাগ উপস্থিতির হার পূর্ণবয়স্ক বয়স্কদের। সে কারণেই তাদের শারীরিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে একটি বিশেষ মেডিকেল টিম সঙ্গে নিয়ে আসা হয় পাশাপাশি জরুরি পরিষেবা প্রদান করার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ও সঙ্গে নিয়ে আসা হয়। বনভোজনের পাশাপাশি বিভিন্ন সাধু-সন্তদের দ্বারা গীতা পাঠ ভাগবত পাঠ ও হরিনাম সংকীর্তন এর মাধ্যমে গোটা এলাকাকে ভরিয়ে তোলা হয়।

0
0

Leave a Comment