অনির্বাণ গুহ
ভূমিপুত্র বলেই হয়তো ! ছিটেফোঁটা বারফটটাই নেই !
কলকাতার প্রথম ডিভিশন এ চুটিয়ে খেলেছেন, মহামেডান স্পো্টিং, ইস্টার্ন রেল, না ওই পর্বে যত না বলা যায় ক্যারিয়ারে ইউ টার্ন তার পর। বাংলায় সুযোগ না হলেও সন্তোষ ট্রফি তে খেললেন কর্ণাটকের হয়ে ! হয়তো এটাই ভবিতব্য ছিল। কারণ ততদিনে দাপিয়ে খেলছেন, হ্যাল ( হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস ) গোয়ার সালগাওকার, এয়ার ইন্ডিয়া তে। ফুটবলার গৌতম দেবনাথ। নাম টা চেনা চেনা লাগছে? সাইড ব্যাক, পরে কোচ সাবির আলির সৌজন্যে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ( ভুল হলে শুধরে দেবেন ) ।
না, সত্যিই কোনও অহং নেই, বিনয়ী হাসি, চোখে চশমা, কথা বার্তায় নিপাট ভদ্রলোক। বর্তমানে বেঙ্গালুরুর স্থায়ী বাসিন্দা, আই টি সেক্টরের বড়ো চাকুরে বলে দিব্যি চালিয়ে দেওয়া যায়!
কিন্তু যথার্থ ভূমিপুত্র বলেই হয়তো, টান টা যাবে কোথায়! তাই সটান বেঙ্গালুরু থেকে বারুইপুর! ফুলতলায় প্রমাণ সাইজের মাঠে একগুচ্ছ খুদের বল নিয়ে দাপাদাপি মনোযোগ দিয়ে দেখছেন, মাঝে মধ্যে সাদা কাগজে ছেলেগুলোর নামের পাশে স্টার মার্ক । গৌতমের কর্মকাণ্ডের আভাস একটু পাওয়া গেলো । হ্যাঁ, ট্রায়াল চলছে, প্রায় সাতশো র উপর ছেলেদের থেকে ৬০ জন কে বেছে নেওয়া কি চাট্টিখানি কাজ ? এবার আরও খোলসা করে বলি ।
তাহলে, আসল গল্পটা কী? এই কর্মযজ্ঞ এর জন্যই বেঙ্গালুরু থেকে উড়ে আসা কলকাতায় ! এদের মধ্যে থেকে বেছে নিয়ে তাদেরকে যথাযথ ট্রেনিং, শিক্ষা, শারীরিক সক্ষমতার শীর্ষে নিয়ে গিয়ে দেশে বিদেশে ভারতীয় ফুটবলার দের জায়গা দেওয়া। অলীক স্বপ্ন মনে করছেন ? গৌতম এর চোখে মুখে প্রত্যয়, এমনটা ধারাবাহিক ভাবে কিন্তু করে চলেছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। না, সবটা নিজের ঘাড়ে রাখেন না! প্রয়োজন হলে বিদেশী কোচ, অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সবটাই ব্যবস্থা করছেন, তাই গর্বের সঙ্গে গৌতমের বক্তব্য, ” বেঙ্গালুরু তে আমার অ্যাকাডেমি র বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিবান ছেলে আজ বিদেশেও খেলছে, এছাড়াও আমার নিজের ক্লাব ‘ বেঙ্গালুরু সকার গ্যালাক্সি ‘ এবং বিজয়নগর বিজয়নগর এফ সি কর্ণাটক লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের প্রতিষ্ঠিত নাম । ও রাজ্যে এখন ফুটবলের প্রাধান্যই বেশি । ” হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন, রাহুল দ্রাবিড় এর রাজ্যে এখন দ্বিতীয় ডিভিশনের প্রত্যেকটা খেলারও সরাসরি সম্প্রচার হয় ইউ টিউবে। আর পদ্ধতি টা এরকমই, নিজের রাজ্য বাংলা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্ষুদেদের বেছে নিয়ে সঠিক সুযোগ করে দেওয়াই গৌতমের লক্ষ্য। সফলও হয়েছেন সে কাজে, মধ্য প্রদেশের আরিয়ান যোশী এখন খেলছে জর্জিয়ার ‘ গারেজি এফ সি ‘ তে। বা বাঁকুড়ার ছেলে অবিল বারুই ওই ক্লাব এরই চতুর্থ ডিভিশনের নিয়মিত সদস্য। এটা স্বপ্নই বটে, আর গরিবগুর্ব পরিবার থেকে আসা এই সব ছেলেপুলেরাই এখন ইউরোপের ফুটবলে জায়গা করে নিয়েছে এই গৌতমেরই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে।
হ্যাঁ, তারই আরও এক এপিসোড চলছে, বারুইপুরের ফুলতলা বি ডি ও মাঠে । একসময় বাংলার অনূর্ধ্ব উনিশের সতীর্থ রহিম নবি, মেহেতাব হুসেন এর থেকে একাজে গৌতমের উন্নত চিন্তাই স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা ডিভিডেন্ড, যাই বলুন দিচ্ছে এই প্রাক্তন ফুটবলার কে।
যোগ্য সঙ্গত করছেন, বিশেষ করে বারুইপুরের ছেলে ‘ ৯৫-‘৯৬ এ গোথিয়া কাপ খেলা মহমেডান স্পোর্টিং এর প্রাক্তন ফুটবলার ও অধিনায়ক শেখ কল্যাণ । আরও লেজুড় আছে এই বিশাল কর্মকাণ্ডে যাদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো! অতনু, আফতারুল রা, হ্যাঁ, রীতিমতো সাপোর্ট স্টাফ সাজিয়ে রেখেছেন গৌতম ! ওরাও, মুন্ডা , জোসেফ রাও ট্রায়াল থেকেই মালুম করেছে এর গুরুত্ব।
একসময় মোহনবাগান এর প্রাক্তনী আর সি প্রকাশের সতীর্থ গৌতম ছুটে বেড়াচ্ছেন, বেঙ্গালুরু থেকে বারুইপুর মায় বছরের বেশ কিছুটা সময় ধরে ইউরোপেও ! স্ত্রী এর যোগ্য সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না এটাও ষোলোআনার মধ্যে আঠারো আনা সত্যি, সেকথা গর্বের সঙ্গে স্বীকার করতেও ভোলেন না গৌতম।
আছে, আছে, আরও চমক আছে ! দেখতে লাজুক গৌতম এবার খুব সতর্ক ! তার কথায়, ” ওটা এক্ষুনি কিছু লিখবেন না, আরও একটু গুছিয়ে নিতে চাই ।” হ্যাঁ, তাই গৌতমের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে আর একফোঁটাও শব্দ খরচ করা যাবে না, আর সেটা পরে শুনলে একবাক্যে স্বীকার করতেই হবে এই ভারতীয় ফুটবলার ইতিমধ্যেই বড়ো স্বপ্নপূরণের নজির গড়তে চলেছেন!