প্রীতিময় সরখেল, ফুলবাড়িঃ কে বলে পৌষ এর শেষের দিনেও বিয়ে হয়না ? আলবৎ হয়, বাস্তবিকই হয় ! তাহলে অবশ্যই নজর ঘোরাতে হবে উত্তরবঙ্গে !
” ছাঁদনাতলায় বিয়ে দেখবে কতজন মিলে, সবাই মিলে দেখবো সোনাহারের বিয়ে।” তাই পৌষ সংক্রান্তির দিন নাচ গান দিয়ে দেখা যায় সোনাহারের বিয়ে। হ্যাঁ , আজও! কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকের বড় শৌলমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের দরিবস ফুলবাড়ির রথ খোলার মাঠ সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা এখনও পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
এই সপ্তাহের শুরুতে ছিলো পৌষ সংক্রান্ত দিন, সোনাহারের বিয়ে ও পূজো উপলক্ষ্যে বাসিন্দাদের মধ্যে ছিলো উৎসবের আমেজ। বিয়ের পর ছিলো খাওয়া দাওয়া আয়োজন।
একসময় বিভিন্ন জায়গায় পৌষ সংক্রান্তির দিন, বা অনেক জায়গায় এই সোনাহারের বিয়ে ও পূজো অনুষ্ঠিত হত। এখন বর্তমান সময়ে এই উৎসব অনেকটাই মুছে গেছে। কিন্তু এই কথা বলাই যায় পুরোন ঐতিহ্য এখনো টিকে রেখেছে রথখোলা এলাকার বাসিন্দারা। তবে তাদের বক্তব্য নতুন প্রজন্মের যেভাবে সারা মিলছে তবে সেটা অনেকটাই পুরনো রীতির মত ফিরে এসেছে।
বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রায় অনেক পুরনো ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। কথায় বলে বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ তার মধ্যে কিন্তু সোনারহারের বিয়ে এক ঐতিহ্য এবং লোকাচার। তবে এই বিয়ে পৌষ মাসের পৌষ সংক্রান্তির দিন হয়ে থাকে। কিন্তু এই পুজো বর্তমানে মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকের দরিবস ফুলবাড়ির রথখোলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকার যুবকদের উদ্যোগ প্রতিবছর পৌষ পার্বণের দিন এই পুজো ও বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
নামটা শুনে রাখুন, রথখোলা এলাকার বাসিন্দা অনিল বিশ্বাস এর কথায়, ” সোনাহারের বিয়ে উপলক্ষে পৌষ মাসের ২০ তারিখের পর সন্ধ্যার পর থেকে প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে সোনাহারের বিয়ে উপলক্ষে রাধাকৃষ্ণের গান করে চাল ও অর্থ সংগ্রহ করা হয়, সেই অর্থ দিয়েই পৌষ সংক্রান্তির দিন সোনা হারের বিয়ে পালন করা হয়। সামাজিক রীতি মেনেই এই বিয়ে হয়। বিয়ের জন্য ব্রাহ্মণ ও নাপিতের ব্যবস্থাও করা হয় আমাদের মধ্যে থেকে। নাচ,গান বাজনা বাজিয়ে এলাকার মহিলারা বিয়ের জন্য জল তুলে নিয়ে এসে বিয়ের আয়োজন করে থাকেন। মাঠের এক প্রান্তে মাটির ডিব্বা নিয়ে চারপাশে চারটি কলা গাছ গেরে বিয়ের মন্ডপ তৈরি করা হয়। গাঁদা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয় মন্ডপটি। বিন্যাঘাস দিয়ে , কুল গাছের ছাল দিয়ে সোনহার ও বউ বানিয়ে হাতে শাঁখা, সিঁদুর পড়িয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। তার পর আসনে বসিয়ে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের শেষ পর্যায়ে মন্ডবের চারিদিকে ১৪ পাক ঘুরে ঘটে জল দেওয়া হয়, শেষ পাকের পর ছোট্ট একটি কলা পাথায় প্রসাদ নিয়ে সেটি ঘটের সামনে গেরে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। বিয়ে দেখতে প্রচুর লোকের সমাগম দেখা যায় মাঠ প্রাঙ্গণে। বিয়ের পর সবার জন্যই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন থাকে সু-স্বাদে তা ভরপুর।” স্মিত হাসি বক্তার মুখে , আমরাও চাই সকলের মুখে এই হাসি থাকুক বছরভর।